কম্পিউটার কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বা কম্পিউটার(computer) কে আবিষ্কার করেন
কম্পিউটার নিয়ে মানুষের কৌতূহল টা দিনে দিনে বাড়ছে। কারণ বর্তমান দিনে কম্পিউটার সম্বন্ধে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাই আজ আমরা এই আর্টিকেলে কম্পিউটার কী ও কত প্রকার এই সব ব্যাপারে সহজ ভাবে জানবো।
এবং অবশ্যই কম্পিউটার সম্বন্ধে আরও যেসব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় গুলি জানা দরকার সেগুলি আলোচনা করবো।
কম্পিউটার কাকে বলে ?
যে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস মানুষের কাছ থেকে নির্দেশ গ্রহন করে গানিতিক এবং লজিকাল কার্যের দ্বারা খুব তাড়াতাড়ি প্রসেসিং করে মানুষের ব্যাবহারের উপযোগী আউটপুট প্রদান করে মেমোরি তে সঞ্চয় রাখে তাকে কম্পিউটার বলে।
আর যদি সহজ এককথায় বলতে হয় তাহলে কম্পিউটার হোল এমন এক ইলেকট্রনিকস যন্ত্র যা মানুষের দেওয়া কমান্ড গুলি(ইনপুট) গ্রহন করে কিছু আর্থাবাহী তথ্য আমাদের আউটপুট হিসেবে দেয় খুব তাড়াতাড়ি।
যেহেতু আমরা কম্পিউটার নিয়ে কথা বলছি তাই কিছু তথ্য যেগুলো অবশ্যই জানা উচিত সেগুলো আমরা জানবো।
কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেন ?
যদিও এটা নিয়ে অনকে মতবাদ আছে তবুও সবচেয়ে যেটা প্রচলিত এবং যেটা মানুষ বিশ্বাস করেন সাইট হচ্ছে এক ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ চার্লস ব্যাবেজ প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেন।
কম্পিউটার এর জনক কে ?
ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ চার্লস ব্যাবেজ কে কম্পিউটার এর জনক বলা হয়।
কম্পিউটার কত সালে আবিষ্কার হয় ?
ব্রিটিশ গণিতবিশারদ চার্লস ব্যাবেজ এর হাত ধরে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার হয়।
কম্পিউটার কত প্রকার ও কী কী ?
কম্পিউটার কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী এই আর্টিক্যাল এ আমরা কম্পিউটার কাকে বলে টা জানলাম।
এবারে আমরা আলোচনা করবো কম্পিউটার এর প্রকাভেদ এর ব্যাপারে।
আপনারা নিশ্চই জানেন যে প্রথমের দিকে মানুষ কম্পিউটার বানাতে এক এক টা বড়ো বড়ো ঘরের প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু বর্তমান দিনে এগুলো খুবই ছোট হয়েছে এমন কি আমরা সেগুলো বয়েও নিয়ে যেতে পারি। যেমন ল্যাপটপ আমরা যেকোন সময় যেকোন জায়গায় বয়ে নিয়ে যেতে পারি।
তাই কম্পিউটার এর আকার, আকৃতি ও কার্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়।
কম্পিউটার কে আকৃতি, কার্য এর ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
I. কাজের ভিত্তিতে
কাজের ভিত্তিতে আবার কম্পিউটার কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- অ্যানালগ কম্পিউটার
- ডিজিটাল কম্পিউটার
- হাইব্রিড কম্পিউটার
II. প্রয়োগের ভিত্তিতে
- সাধারণ কম্পিউটার
- বিশেষ কম্পিউটার
III. আকারের ভিত্তিতে
- মিনি কম্পিউটার
- সুপার কম্পিউটার
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার
- মাইক্রো কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটার তিনটি ভাগ হোল।
- ডেক্সটপ কম্পিউটার
- ল্যাপটপ কম্পিউটার
- হ্যান্ডহেল্ড কম্পিউটার
আমরা কম্পিউটার এর সকল ভাগ জানতে পেরেছি কিন্তু এবারে কম্পিউটার এর সকল ভাগ কে বিস্তারিত জানবো।
প্রথমেই আমরা কাজের ভিত্তিতে তিনটি কম্পিউটার এর কথা জেনে ফেলবো যথা অ্যানালগ, ডিজিটাল, হাইব্রিড কম্পিউটার এর সম্বন্ধে।
A. অ্যানালগ কম্পিউটার কাকে বলে
অনালোগ কম্পিউটার সম ডাটার উপর কাজ করে। যেকোন ধরনের তরঙ্গ কে অ্যানালগ বলতে পারি যদি সেটা সময়ের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পরিবর্তিত হয়। এক কথায় বলতে গেলে, যে কমপিউটার কোন সমস্যার সমাধান করার সঙ্গে ভৌত সমতা যুক্ত মান পরিমাপের মাধ্যমে কার্য সম্পাদন করে, তাকে বলা হয় অ্যানালগ কম্পিউটার।
Ex:- স্পিডোমিটার, পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল পরিমাপ এর যন্ত্র
ব্যাবহার :-
- ইলেকট্রিক রোধ পরিমাপ করা হয়
- তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়
- পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল এর পরিমাপ করা হয় এবং পেট্রোল এর দাম পরিমাপ করা হয়।
আরও পড়ুন :-
- টপোলজি কাকে বলে। টপোলজি কতপ্রকার ও কি কি ?
- ডোমেইন কী ? কিভাবে হোস্ট করতে হয়
B. ডিজিটাল কম্পিউটার কাকে বলে
এই ডিজিটাল কম্পিউটার বাইনারী সংখ্যা(binary digit) নিয়ে কাজ করে। Bynari digit বলতে 0 এবং 1 কে বোঝায়।
যে কম্পিউটার ডাটা(তথ্য) ইনপুট হিসেবে নিয়ে সঞ্চয় করে এবং computer digit কে প্রধান একক হিসেবে ব্যাবহার করে কাউন্টিং এর দ্বারা কাজ সম্পাদনা করে ও বিচ্ছিন্ন ভাবে ফলাফল দেয় তাকে বলে ডিজিটাল কমপিউটার(digital computer) বলে।
এই কম্পিউটার কে ইনপুট দেওয়ার জন্য বিভিন্ন হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ ও অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যাবহার করা হয়।
এই কম্পিউটার এর সুফল গুলি হোল :-
- Digital computer অ্যানালগ কম্পিউটার এর তুলনায় বেশি নির্ভুল ভাবে কাজ করে।
- এই কম্পিউটার স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, রিসার্চ, ইঞ্জিনিয়ারিং, গবেষণা, বিভিন্ন জায়গায় ব্যাবহৃত হয়।
- নির্ভরযোগ্য
- যেকোনো mathemetical এবং লজিকাল সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম
বৈশিষ্ট্য :-
- কর্ম দক্ষতা ও স্পিড যথেষ্ট বেশি এই কম্পিউটারের।
- অনেক ডাটা স্টোর করতে পারে
- বাইনারী সংখ্যা(1,0) নিয়ে কাজ করে।
C. হাইব্রিড কম্পিউটার কাকে বলে
হাইব্রিড কথাটার মধ্যেই এর উত্তর আছে। আপনার নিশ্চই জানেন যে যেকোন হাইব্রিড দুটি জিনিসের সংমিশ্রণে বানানো হয়।
ঠিক তেমনি অ্যানালগ ও ডিজিটাল এই দুটি কম্পিউটার এর সংমিশ্রণে তৈরী hybrid computer।
যেহেতু দুই কম্পিউটার এর সংমিশ্রণে এই কম্পিউটার তৈরী দুটি কম্পিউটার এর বৈশিষ্ট ও এখানে বর্তমান।
বৈশিষ্ট্য :-
- এই কম্পিউটার খুবই দ্রুত কাজ করতে পারে
- বিশ্বাস যোগ্য ও নির্ভর যোগ্য
- যেকোন অ্যানালগ ডাটা কে ডিজিটাল ডাটায় পরিবর্তন করতে এটা কাজে আসে।
ব্যাবহার :-
- মেডিক্যাল দপ্তরে আইসিইউ(icu) তে ব্যবহৃত হয়।
- হৃতপিণ্ডের ক্রিয়া, তাপমাত্রার বিভিন্ন বিষয় পরিমাপ করার জন্য এটা ব্যাবহার করা হয়।
1. মিনি কম্পিউটার কাকে বলে
মিনি কম্পিউটার(mini computer) তার cpu (Central processing unit), মেমোরি ও স্টোরেজ একটি সারির মত সাজিয়ে রাখে।
এটা multi-user কম্পিউটার। মাল্টি ইউজার বলতে বোঝায় একের বেশি মানুষ এটাকে ব্যাবহার করতে পারে।
এর আকৃতি মিডিয়াম ধরনের। এর প্রাইস লাখ থেকে শুরু হয়। মিনি কম্পিউটার এ 32 বিট পর্যন্ত মাইক্রো প্রসেসর চিপ ব্যাবহার করা হয়।
এর প্রসেসিং স্পীড 500 kips (কিলো ইনস্ট্রাকশন পার সেকেন্ড)।
Ex:- IBM(8000 series), VAX 7500 প্রভিতি।
বৈশিষ্ট্য :-
- এগুলো পোর্টেবল নয়
- ক্ষমতা মাঝামাঝি ধরনের
- এগুলোর মেমোরি ক্যাপাসিটি বেশি
- মাল্টি ইউজার এর ফেসিলিটি যুক্ত এই কম্পিউটার গুলি একের বেশি ইউজার ব্যাবহার করতে পারে।
ব্যাবহার :-
- Network সংক্রান্ত কাজের জন্য এগুলো ব্যাবহার হয়।
- টেকনিক্যাল কাজকর্ম করা যায়
- ডাটাবেস ম্যানেজ মেন্ট করা যায়।
- একাউন্টিং করা যায়
- ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটা প্রোসেসিং করা যায়।
- Word processing সহ ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজ্ঞান এর ব্যাবহার করা যায়।
2. সুপার কম্পিউটার কাকে বলে
সুপার কম্পিউটার এর নামের মধ্যেই ইঙ্গিত পেয়ে যাচ্ছি এই কম্পিউটার এর কিছু তো বিশেষত্ব আছে হ্যাঁ ঠিকই ভাবছেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার। এই কম্পিউটার গুলি মাইক্রো কম্পিউটার (আমাদের বাড়িতে ব্যাবহৃত সাধারণ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ) গুলির থেকে কয়েক কোটি গুন বেশি দ্রুত।
এই কম্পিউটার গুলি data স্টোর করার বাকি কম্পিউটার এর থেকে অনেক বেশি। এগুলো কয়েক নেনো, পিকো সেকেন্ড এ কাজ করতে সক্ষম।
এবং super computer 200 জনের বেশি ব্যাবহার কারি ব্যবহার করতে পারে।
কিন্তু বন্ধুরা এগুলো আপনার আমার মত সাধারণ মানুষের ব্যবহার এর জন্য নয়। এই কম্পিউটার বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও রিসার্চ এর জন্য ব্যাবহার হয়।
সুপার কম্পিউটার এর প্রসেসিং পাওয়ার খুবই বেশি। এবং এগুলো একাধিক প্রসেসর যুক্ত। কয়েক সেকেন্ডে 2 থেকে 9 কোটি পর্যন্ত গণনা করতে পারবেন।
Ex:- cray-3, param(param সুপার কম্পিউটার ভারতে তৈরি), cyber-205 প্রভীতি।
বৈশিষ্ট্য :-
- বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত কম্পিউটার।
- কম্পিউটার গুলিতে একের বেশি সিপিইউ থাকে
- Parallel processing হয়।
- একাধিক ইউজার ব্যাবহার করতে পারে।
- এগুলোর স্টোরেজ অনেক বেশি
ব্যাবহার :-
- এরোডাইনামিক ডিজাইন এর ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়।
- রিসার্চ এর জন্য ব্যাবহার করা হয়।
- জিওলজিকাল ডাটা সিমুলেশন এর ক্ষেত্রে ব্যাবহার হয়।
- স্পেস রিসার্চ, বিমান চালনা বিদ্যা, তে ব্যাবহৃত হয়।
- এছাড়াও বৈজ্ঞানিক কার্য ও সংখ্যা তত্ত্ব সমস্যা সমাধান এর জন্য ব্যাবহার করা হয়।
- Bio medicine, তেলের খনি খোঁজা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস সমন্ধে জানতে ব্যাবহৃত হয়। এছাড়াও আরও অনেক কাজে র জন্য এই কম্পিউটার ব্যাবহার আছে।
3. মেনফ্রেম কম্পিউটার কাকে বলে
Mainframe computer প্রসেসিং স্পিড 100 MPS (Million instructions per second)।
এই সমস্ত কম্পিউটার ডাটা জমা রাখার ক্ষমতা 8.4 মিলিয়ন, তা সত্ত্বেও এরা অনেক বেশি স্পিডে জটিল সাইন্টিফিক ও mathematical প্রবলেম এর সমাধান করতে সক্ষম।
তাছাড়াও একসঙ্গে অনেক মানুষ এটা ব্যাবহার করতে পারে ও এতে 32-128 মাইক্রো প্রসেসর এর চিপ ব্যাবহার করা হয়।
Ex:- IBM 4381, VAX 8000 প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য :-
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার পোর্টেবল অর্থাত্ বহন যোগ্য নয়।
- স্টোরেজ ক্ষমতা অনেক বেশি
- এর আয়তন প্রায় একটি ঘরের মাপে
- অনেকে ব্যাবহার করতে পারে
- সুপার কম্পিউটার এর চেয়ে ধীরে কাজ করে
- সাধারণ মানুষ এর বহন করতে পারবেনা।
ব্যাবহার :-
- বড়ো বড়ো সংস্থায় অনেক ডাটা নিয়ে কাজ করা হয়।
- নেশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক সিস্টেম এ ব্যাবহৃত হয়।
- বৈজ্ঞানিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়।
4. মাইক্রো কম্পিউটার কাকে বলে
এই কম্পিউটার গুলি আমরা বাড়িতে পার্সোনাল ব্যাবহার করে থাকি। এর মেমোরি কম এবং স্টোরেজ ও কম হয়, আর এগুলো চালানোর জন্য শক্তি ও কম লাগে।
এগুলো ডাটাবেস, একাউন্টিং, ওয়ার্ড প্রসেসিং, এডুকেশন, প্রফেসনাল কাজের জন্যে ব্যাবহার হয়। এছাড়া ব্যাবসায় ও ব্যাবহৃত হয়।
এগুলো সুপার কম্পিউটার এর থেকে কয়েক লাখ গুন কম কার্যক্ষমতা সম্পন্ন। পার্সোনাল ব্যাবহার এর জন্যে এই কম্পিউটার গুলি সর্ব প্রথম IBM বাজারে আনে।
মাইক্রো কম্পিউটার এ একটি ক্যাবিনেট থাকে যেখানে হার্ডডিস্ক, SMPS, ডিস্ক ড্রাইভ, ফ্লপি ডিস্ক লাগানোর জায়গা থাকে।
এর দাম সাধারণ মানুষ বহন করতে পারে। এর দাম 10,000 থেকে শুরু করে 200,000 পর্যন্ত হতে পারে বা এর চেয়ে বেশি হতে পারে।
মিনিকম্পিউটার বানায় এমন কিছু কোম্পানির নাম: HP, Dell, Apple, Acer, Avita, Lenovo প্রভৃতি।
যেমন :- Laptop, Desktop
বৈশিষ্ট্য :-
- আকারে ছোট
- দাম কম
- শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা যায়
- ল্যাপটপ বহযোগ্য
- মাইক্রো প্রসেসর এর ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়।
শেষ কথা ও সারমর্ম
আশাকরি কম্পিউটার কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী ? এই আর্টিকেল এ সব কম্পিউটার সম্বন্ধে ভালো ভাবে জানতে পেরেছেন।
এর যদি কোন ভুল থাকে বা কোন মিসিং থাকে তাহলে অবশ্যই জানাবেন আমরা সেটা কে আবার সংশোধন করার চেষ্টা করবো।
আর্টিকেল টি যদি কাজে আসে তাহলে বন্ধুদের অবশ্যই শেয়ার করবেন যাতে তারাও আপনার মত স্মার্ট হতে পারে।
যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা কোন মন্তব্য থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আপনার মতামত দিন, কারণ codexhui.com আপনার মতামত কে গুরুত্ব দেয়।
Community Feedback